কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক যার বর্তমান নাম “শহীদ এটিএম জাফর আলম-আরাকান সড়ক”।সড়কটির নামকরণ করা হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম শহীদ স্বাধীনতা পদকে ভূষিত (মরণোত্তর),বর্তমান মন্ত্রীপরিষদ সচিব জনাব শফিউল আলম স্যারের ভাই,উখিয়ার কৃতী সন্তান এটিএম জাফর আলম এর নামে।কক্সবাজার লিংকরোড থেকে টেকনাফ উপশহরের শাপলা চত্বর পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য ৭৯ কিলোমিটার।বৃটিশ ও পাকিস্তান শাসন আমল থেকেই এই আঞ্চলের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে এসড়কের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।বর্তমানে এই সড়ককে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি বেসরকারি স্থাপনা।
তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ কক্সবাজার বিসিক শিল্পনগরী, কক্সবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, RAB -১৫ সদরদপ্তর,মাতৃসদন হাসপাতাল, আর্মি ক্যান্টেনমেন্ট,বোটানিক্যাল গার্ডেন,ইনানী সীবিচ,উখিয়া উপজেলা সদর,বিশ্বের বৃহত্তম রোহিঙ্গা ক্যাম্প,সেন্টমার্টিন দ্বীপ,টেকনাফ উপজেলা সদর সহ বেশ কিছু স্থান/স্থাপনা।কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় হলেও এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি বর্তমানে বেহাল অবস্থায় পতিত হয়েছে।এসড়ক ব্যবহার করে এখন কেউ আর আগের মত সময়সূচি মেনে অফিস আদালত,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা হাসপাতালে পৌছাতে পারেননা।তার অন্যতম কারণ হল অসহনীয় তীব্র যানজট।যানজটের কারণে অন্যান্য রাস্তার মত হলেও এসড়কে কিছু ভিন্ন কারণও রয়েছে।যেমনঃঅতি ভোরবেলা থেকে কক্সবাজার শহর থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সেবাদাতাদের গাড়িবহর,বেলা বাড়ার সাথে সাথে ঐ সেবাদাতার সিনিয়রদের গাড়িবহর তার সাথে যুক্ত আছে ভিআইপি ও ভিভিআইপিদের ক্যাম্প(নতুন পর্যটন স্থান) পরিদর্শন। এর বাইরে আছে নিয়মিত ত্রাণবাহী অতিরিক্ত পণ্যবোঝায় ট্রাক,বাঁশও ইট বোঝায় ট্রাকও দেখা মিলে প্রায় সারাদিন। দুপুর ১টা-২টা বাজতে না বাজতেই আবার সেই ক্যাম্প ফেরত ক্লান্ত সেবকদের গাড়িবহরের কক্সবাজার শহরে যাত্রা!শুধু তাই নয় সড়ক উন্নয়নে ধীরগতি,সড়কের বড়/মাঝারি আকারের গর্ত এ সড়কের আজকের করুণ অবস্থার জন্য অনেকাংশে দায়ী।ইতিমধ্যে এ রাস্তার অনেক অংশে দুপাশ কেটে নালা বানানো হয়েছে যাতে নিয়মিত যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।প্রায় প্রতি নিয়ত ঘটছে অনাকাঙ্ক্ষিত দূর্ঘটনাও।বৃটিশ আমলের নাকশাকৃত সেই আকাঁবাকাঁ ও উঁচু নিচু রাস্তা এখনো রয়েগেছে।কোন কোন অংশ এতই আঁকাবাঁকা পুরোনো চালক ব্যতিত অন্য চালকরা গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারান প্রায় সময়।সর্বোপরি রাস্তার ধারন ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি গাড়ির যাতায়াত,ফিটনেস বিহীন যানবাহন,অদক্ষ চালক,স্টেশনগুলোতে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং,কোন কোন অংশে পানিতে ডোবা ইত্যাদি কারণপ এদশা তরান্বিত করছে।এই করুণ দশার স্থায়ী সমাধানের জন্য কিছু জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।প্রথমতঃ সড়ক পুনঃ সংস্কারের সয়ম আঁকাবাঁকা অংশ সোজা ও সমতল করা।রাস্তায় পুরোনো আমলের সংস্কার পদ্ধতির পরিবর্তে নতুন ও টেকসই পদ্ধতির ব্যবহার করা।দ্বিতীয়তঃ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত সেবাদাতাদের বিলাশবহুল কক্সবাজার শহরের পরিবর্তে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিকটে বসবাস নিশ্চিত করা।প্রয়োজনে ভিভিআইপি যাতায়াতের জন্য ক্যাম্পের অভ্যন্তরে হেলিপ্যাড নির্মাণ করে আকাশ পথে যাতায়াত ব্যবস্থা করা।তৃতীয়তঃ রেজিষ্ট্রেশন বিহীন গাড়ি ও অতিরিক্ত পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল বন্ধ করা।অদক্ষ(লাইসেন্স বিহীন) চালকের হাতে কোন যানবাহন না দেওয়া।চতুর্থতঃসড়ক মেরামত/পরিচর্যার দায়িত্ব স্বস্ব উপজেলা পরিষদকে দেওয়া।পঞ্চমতঃ রোহিঙ্গাদের দ্রুত তাদের মাতৃভূমি মায়ানমারে ফেরত পাঠানো।যানজট কেবল মানুষের সময় নস্ট করেনা বরং জীবনহানিও ঘটায়।এই সড়কের শৃঙ্খলা ফিরে আসলেই সড়কের নামকরণ (শহীদ এটিএম জাফর আলম-আরাকান সড়ক) স্বার্থক হবে।সড়ক নিরাপদ হলেই জীবন নিরাপদ হবে।নিরাপদ সড়কের বিকল্প নেই।
লেখকঃ
জিয়াউর রহমান মুকুল,
মানবিক ও উন্নয়ন কর্মী,
শেড,কক্সবাজার।
ইমেলঃ [email protected]
পাঠকের মতামত